অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নরওয়ে ভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, ইরানে চলমান বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে কমপক্ষে একশ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে বা তাদের বিরুদ্ধে এ ধরণের শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদের মধ্যে পাঁচজন নারীও আছেন যারা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। তবে দেশটিতে আসলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার অপেক্ষায় যারা আছেন, তাদের প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া কঠিন। কারণ এসব পরিবারগুলোকে চুপ থাকার জন্য চাপ দেয়া হয়।
এ মাসেই দুই জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরও করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এদের বিচারকে ‘প্রহসনের বিচার’ হিসেবে অভিহিত করেছে। মহসেন শেকারি ও মাজিদরেজা রাহনাভার্দ উভয়েই তেইশ বছর বয়সী।
তাদের বিরুদ্ধে সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে শত্রুতার অভিযোগ এনে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বিপ্লবী আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে ইরানে প্রায় তিন মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে।
গত তেরই সেপ্টেম্বর ইরানের কথিত নৈতিকতা পুলিশ হিজাব না পড়ার দায়ে তাকে আটক করে। পরে নিরাপত্তা হেফাজতেই তার মৃত্যু হলে পরিবার থেকে ওই তরুণীকে হেফাজতে মারধরের অভিযোগ আনা হয়।
তবে কর্তৃপক্ষ এ আন্দোলনকে ‘বিদেশীদের সহায়তায় পুষ্ট দাঙ্গা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। আইএইচআরের হিসেবে এ পর্যন্ত বিক্ষোভের সময় সহিংসতায় অন্তত ৪৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ জন নারী ও ৬৪ জন শিশুও রয়েছে।
সংস্থাটির এক রিপোর্টে অন্তত একশ জন ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে তাদের মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি হয়তো কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে বা পরিবার থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এরা সবাই আইনজীবীর নিয়োগ এবং বিচারের যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
অনেক ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ করতে পেরেছেন বা তাদের ঘটনাগুলো অন্য কারাবন্দী বা মানবাধিকার কর্মীদের জানিয়েছেন। এদের সবাইকে স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।
এদের মধ্যে একজন হলেন ২২ বছর বয়সী মোহাম্মদ ঘোভাদলু। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। তার বিরুদ্ধে তেহরানে একটি সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তার মা জানিয়েছেন, এই তরুণ মানসিকভাবে অসুস্থ এবং তাকে দ্রুততর সময়ে বিচার শেষ করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। কোনো আইনি সহায়তাও সে পায়নি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আবার পাঁচ জন নারী যারা মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকিতে আছেন, এর মধ্যে মজগান কাভৌসি কুর্দি ভাষা শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী। তার বিরুদ্ধে ‘করাপশন অফ আর্থ’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
একজন কৌশলী জানিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে মানুষকে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে কাভৌসির বিরুদ্ধে।
আইএইচআর ডিরেক্টর মাহমুদ আমিরি মোগাদ্দাম জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বা কারও কারও দণ্ড কার্যকর করে (কর্তৃপক্ষ) মানুষকে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য করতে চায়।
ওদিকে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ব্রিটিশ ও ইরানি দ্বৈত নাগরিকত্ব আছেন এমন সাত ব্যক্তিকে বিপ্লবী গার্ড আটক করেছে বলে যে খবর এসেছে সে সম্পর্কে দ্রুত তারা ইরানি কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাইবে।
ডাউনিং স্ট্রীটের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা সবসময় বলি যে আমাদের নাগরিকদের কখনো কূটনৈতিক সুবিধা আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার আমরা গ্রহণ করবো না।’
এদিকে ফ্রান্স জানিয়েছে, সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সেখানে একটি নদীর তীরে একজন ইরানি নাগরিকের আত্মহত্যার বিষয়টি তদন্ত করছে। ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ মোরাদি সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, ইরানে চলমান দমন পীড়নের বিষয়টি সবার দৃষ্টিতে আনতে তিনি আত্মহত্যা করবেন।
এর মধ্যেই ইরানের শীর্ষস্থানীয় দাবা খেলোয়াড় সারা খাদেম কাজাখিস্তানে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন কোনো হিজাব মাথায় না দিয়েই যাতে ইরানে নারীদের বর্তমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশের বাইরে ইরানকে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রেও নারীদের হিজাব মাথায় দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে ইরানে। সুত্রঃ বিবিসি
Leave a Reply